মোঃ রেজাউল করিম,
ক্রাইম ইনভিস্টিগেটর,ময়মনসিংহ:যে ইতিহাস আমরা আজও হয়তো অনেকেই জানিনা।
আন্তর্জাতিক মে দিবস আসলে,শুধু ১৩৮ বছর(১৮৮৬সালের) ইতিহাসের কথাই শুধু বলি এবং জানি। কিন্তু অনেক আগেই এই খেটে খাওয়া ও শ্রমজীবী মানুষের পাশে থেকে দাঁড়িয়ে তিনি সেই কথাগুলো শত শত বছর আগে বিশ্ব নবী(সঃ) বলে গেছেন।
উম্মতের উদ্দেশ্য নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) এর সর্বশেষ ভাষণ ছিলো বিদায় হজের ভাষণ। বুঝতেই পারছেন বিদায় হজের ভাষণের গুরুত্ব কেমন। সেই ভাষণে যে বিষয়গুলোর ওপর তিনি কথা বলেছিলেন,তার ভেতর একটা পয়েন্টে তিনি বলেছিলেন —শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথাঃ-
“তোমাদের অধীনদের প্রতি খেয়াল রাখবে। তোমরা যা
খাবে, তাদেরকেও তাই খাওয়াবে। তোমরা নিজেরা যা পরিধান করবে, তাদেরকেও তাই দিবে।”
শ্রমিকের মজুরী পরিশোধ নিয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস
আছে হয়রত মুহম্মদ(সা.) এর—
“শ্রমিকের শরীরের ঘাম শুকাবার পূর্বেই তোমরা তার মজুরী
পরিশোধ করো।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ২৪৪৩)
আরেকটি হাদীসে বর্ণিত আছে—
আল্লাহকে উদ্ধৃতি করে রাসূল (সা.) তাঁর বয়ানে উল্লেখ করেছেন— কিয়ামতের দিন আমি( আল্লাহ) তিন ব্যক্তির বিপক্ষে থাকব। …এদের একজন হবে সে, যে কাউকে শ্রমিক হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার পর তার থেকে কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ তার প্রাপ্য মজুরী দেয়নি।”
(বুখারি শরীফ, হাদিস নং ২২২৭)
শ্রমিক দিবস আসলেই তাদের অধিকার নিয়ে অনেক ভালো
ভালো কথাবার্তা হয়। চিন্তা করে দেখুন এইতো মাত্র দেড়শ বছরও হয়নাই শিকাগোর ১৮৮৬ সালের ঘটনার, পৃথিবীর সবচেয়ে অ ধি কা র সচেতন সমাজেও শ্রমিকদের ন্যূনতম অ ধি কা রে র জন্য কত কত ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে, বৈশ্বিক অবস্থা চিন্তা করলে এখনও প্রতিনিয়ত অসংখ্য বৈষম্যের শিকার হয় শ্রমিকেরা।
অথচ আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে যখন আজকের দিনের মত শ্রমিকই না, বরং এরচেয়েও বহুগুণ কঠিন দাসদাসী
সিস্টেম সমাজে বিদ্যমান ছিলো, ওই সময়ে দাঁড়িয়েও একজন মানুষ শ্রমিকের ওইসব অ ধি কা র কে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন এবং সেগুলো আদায় করার জন্য এত কঠোর বাণী দিয়ে গেছেন, যেগুলো অনেকক্ষেত্রেই এই মডার্ন দুনিয়ায়ও ঠিকমত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কতোটা প্রোগ্রেসিভ ছিলেন তিনি, একটু মিলিয়ে নিন জাস্ট এই একটা ইস্যু থেকেই।
শ্রমিকদের অ ধি কা রে র প্রশ্নে বড় বড় দার্শনিক ও চিন্তকদের আলাপ যখন ওঠে আলোচনার টেবিলে, তখন শ্রমিকদের অ ধি কা র নিয়ে ওই মানুষটার অবদানের কথা আলোচনা করা হয় কি সুশীলদের আলোচনা সভায়?
ইনফ্যাক্ট শুধু যে সুশীলদের আলোচনাতেই উনার কথা অনুপস্থিত থাকে, ব্যাপারটা এমনও না। সো কল্ড ধর্মীয় ঘরানার লোকজন যারা আছে, হাতে মাইক পেলেই যারা চিল্লাপাল্লা করে ঝড় তুলে ফেলেন, তাদের বক্তব্যেও রাসূল (সা.) এর আলোচনাটা শুধু ধর্মীয় মাসলা মাসায়েলে সীমাবদ্ধ থাকে, তাঁর জীবনাচার কিংবা বিভিন্ন নির্দেশনাগুলোকে স্যোসিও-পলিটিক্যাল লেন্স দিয়ে বিশ্লেষণ করে সেগুলোর ইম্প্যাক্ট সংক্রান্ত তেমন কোন আলোচনাই করা হয় না। এই জায়গাগুলো নিয়ে রিসার্চের বহু জায়গা আছে।
রাসূল(সা.) সমাজের শ্রমজীবী মানুষের অ ধি কা র প্রসঙ্গে যতোটা গুরুত্বারোপ করেছিলেন আজ থেকে ১৪০০ বছর পূর্বে, সম্ভবত এই ২০২৪ এ এসেও তার ওই আদর্শ আমরা ধারণ করতে পারি নাই। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে রাসূল(সা.) এর নির্দেশনা বা জীবনাচরণ নিয়ে আমাদের স্যোসিও- পলিটিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কে আলোচনা খুবই কম হয়, এর ফলে তাঁর মূল্যায়নটাকে শুধুমাত্র ধর্মীয় পার্সপেক্টিভেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি আমরা।
আইন পড়তে গিয়ে একাডেমিক্যালি মানুষের বিভিন্ন ধরনের অ ধি কা র সংক্রান্ত ইস্যুগুলো নিয়ে যতবেশি পড়া শুরু আমারা করেছি (প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য উভয় লেন্সেই), ততবেশি রাসূল(সা.) এর প্রতি শ্রদ্ধাটা বেড়ে গেছে আমাদের।
একইসাথে আপসোস বেড়েছে এইটা ভেবে যে স্যোশিও-পলিটিক্যাল ইস্যুগুলোতে উনার যে সীমাহীন কন্ট্রিবিউশন আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা কত্ত কম জানি! আফসোস!
তথ্যসহতায়:
সাহিদ আব্দুল্লাহ্