![](https://crimetalash.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
মোঃ রেজাউল করিম:সিংহ্পুরুষ মুসলিম জাতির অনুপ্রেরণা,বিপ্লবের অপর এক নাম”শহীদ তিতুমীর”।
আজ তার শুভ জন্মদিন। ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি (১১৮৮ বঙ্গাব্দ, ১৪ মাঘ) পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলার বশিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্ব নাম,সৈয়দ মীর নিসার আলী,তিনি তিতুমীর নামে পরিচিত।
বাংলার প্রজাদের উপর স্থানীয় হিন্দু জমিদার এবং ইউরোপীয় নীলকরদের অত্যাচার প্রতিরোধ এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে বাংলাকে মুক্ত করার লক্ষ্যে পরিচালিত আন্দোলনের এক কিংবদন্তি নেতা শহীদ তিতুমীর।
প্রাথমিক পর্যায়ে তার আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল,
সমাজ,তথা সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কার। মুসলিম সমাজে শিরক ও বিদআতের অনুশীলন নির্মূল করা। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন অনুসরণে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল তার এ আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য।
তিতুমীর অত্যাচারী হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত ‘দাঁড়ির খাজনা’ এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীর ও তার অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে। মুসলমানদের প্রতি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং তাদের উপর অবৈধ কর আরোপের জন্য হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে তিতুমীরের সংঘর্ষ বাঁধে। কৃষককুলের উপর হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার প্রতিরোধ করতে গিয়ে অপরাপর অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের সঙ্গেও তিতুমীর সংঘর্ষে লিপ্ত হন। তিতুমীরের শক্তি বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে হিন্দু জমিদারগণ তার বিরুদ্ধে সম্মিলিত ভাবে প্রতিরোধ সৃষ্টি এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইংরেজদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালায়।
তিতুমীর চবিবশ পরগনা, নদীয়া ও ফরিদপুর জেলায় স্বীয় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তাকি ও গোবরডাঙার অত্যাচারী হিন্দু জমিদারগণ ইংরেজদের শরণাপন্ন হলে কলকাতা থেকে এক ইংরেজ বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়। কিন্তু ইংরেজ ও অত্যাচারী হিন্দু জমিদারদের সম্মিলিত বাহিনী তিতুমীরের বীর বাহিনীর নিকট শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। অবশেষে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল স্টুয়ার্টের নেতৃত্বে ১০০ অশ্বারোহী,৩০০ স্থানীয় পদাতিক,দুটি কামানসহ গোলন্দাজ সৈন্যের এক নিয়মিত বাহিনী তিতুমীরের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।
১৮৩১ সালের ১৪ নভেম্বর ইংরেজ বাহিনী বাশেরকেল্লার উপর আক্রমণ চালায়। কামান ও আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীকে তিতুমীর তার স্থানীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়ে বাঁশেরকেল্লায় আশ্রয় নেয়। ইংরেজরা কামানে গোলাবর্ষণ করে কেল্লা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করে দেয়। তিতুমীরের বিপুল সংখ্যক সৈনিক প্রাণ হারায়।কয়েকদিন রক্তক্ষয়ি যুদ্ধের পর ১৯ নভেম্বরে বহুসংখ্যক অনুসারিসহ তিতুমীর শহীদ হন। অধিনায়ক গোলাম মাসুমসহ ৩৫০ জন বিপ্লবী সৈনিক ইংরেজদের হাতে বন্দি হন। গোলাম মাসুম মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হন।
তিতুমীর অত্যাচারী হিন্দু জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম ও তার বিখ্যাত বাঁশেরকেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশেরকেল্লাতেই এই মহান বীর শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন।
এই কিংবদন্তি নেতা ইতিহাসে অমর হয়ে আজো আছে।
ইতিহাস খ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামের সিংহপুরুষ “শহীদ তিতুমীর”।