![](https://crimetalash.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
মোঃ রাসেল আহমদ আকাশ,নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাণী
“মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুন:প্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা, জেড ফোর্সের অধিনায়ক ও অগ্রদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকীতে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শহীদ জিয়ার প্রবর্তিত কালজয়ী দর্শন ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ ও তাঁর কালোত্তীর্ণ আদর্শ বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রবল উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্য এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রকে সুরক্ষার চেতনা, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ থেকে উৎসারিত।
বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব এক ক্রান্তিকালে। ১৯৭১ সালে তাঁর কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা সেই সময় সারাদেশে মানুষের মনে সাহস ও উদ্দীপনা যুগিয়েছিল। তিনি জাতীয় সকল সংকটে দেশ ও জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাঁকে বীর উত্তম খেতাব দেওয়া হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের ময়দানে বীরোচিত ভূমিকা এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে তাঁর অনবদ্য অবদানের কথা আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে দেশের মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষনা পুরো জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এই ঘোষনা বিদ্যুৎ তরঙ্গের মতো তরুণ, যুবকসহ নানা স্তরের মানুষকে মরণপণ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে জাতি বিদেশী শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। বিজয় অর্জনের অব্যবহিত পরে তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর দুর্বিনীত দু:শাসনে মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা ও কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র মাটিচাপা পড়ে। একের পর এক দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, বহুমত ও পথের অনুশীলন বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশ একদলীয় সামন্ততান্ত্রিক শাসনের নিষ্ঠুর যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। সেই সময় দেশের সর্বত্র বীভৎস অরাজকতা নেমে আসে। গণতন্ত্র হত্যা ও অরাজকতার অমানিশার দুর্যোগের মুখে দেশের সিপাহী—জনতার মিলিত শক্তির মিছিলে জিয়াউর রহমান জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হন। ফিরিয়ে দেন বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং সংবাদপত্র ও বাক স্বাধীনতা। ‘তিনি তাঁর দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি সব দলের রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন।’ তিনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করেন। তলাবিহীন ঝুড়ির আখ্যা থেকে বাংলাদেশ হয় খাদ্য রপ্তানীকারক দেশ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, সমাজ, অর্থনীতি, শিল্প ও প্রযুক্তিসহ সব সেক্টরেই কর্মচাঞ্চল্যের মাধ্যমে অগ্রগতি নিশ্চিত হয়।
এই মহান উদার গণতন্ত্রী শহীদ জিয়ার জনপ্রিয়তা দেশী—বিদেশী চক্রান্তকারীরা কখনোই মেনে নিতে পারেনি। এই চক্রান্তকারীরা ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে। এই মর্মান্তিক ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশবাসী একজন মহান দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদীকে হারায়। তবে চক্রান্তকারীরা যতই চেষ্টা করুক কোন ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ককে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তিনি বিস্মৃত হন না বরং নিজ দেশের জনগণের হৃদয়ে চিরজাগরুক হয়ে অবস্থান করেন। জাতীয় জীবনের চলমান সংকটে শহীদ জিয়ার প্রদর্শিত পথ ও আদর্শ বুকে ধারণ করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে এবং জাতীয় স্বার্থ, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষায় ইস্পাতকঠিন গণঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
বর্তমান ডামি আওয়ামী সরকার দেশে একদলীয় দুঃশাসন পুন:প্রতিষ্ঠা করেছে। বিরোধী দলের অধিকার, চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে বর্তমান সরকার। সেজন্য গণতন্ত্রের পক্ষে আপোসহীন যোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী করে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, তাঁকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অবিলম্বে তাঁর মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
একইসঙ্গে নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন সৃষ্টিকারী নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানকে অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। গণতন্ত্রকামী প্রায় ৫০ লক্ষ রাজনৈতিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে অনেককে সাজা দেয়া হয়েছে, নিত্যদিনই অসংখ্য নেতাকর্মীকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
হত্যা, খুন, গুম ও বিনা বিচারে হত্যা এবং অমানবিক নির্যাতন যেন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভাগ্যের লিখন করা হয়েছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা এবং আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রুপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমকে আমাদের বারবার স্মরণ ও অনুসরণ করতে হবে। এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ ও অবৈধ সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
রণাঙ্গনের অনন্য মুক্তিযোদ্ধা, নির্ভীক, নির্মোহ রাষ্ট্রনায়ক শহীদ জিয়ার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী শক্তির ক্রমাগত বিদ্বেষপূর্ণ আক্রমণের পটভূমিতে তাঁর অম্লান স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে এবার ৩০ মে মহান নেতার শাহাদাতবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের জন্য দল, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা—কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল স্তরের জনগণের প্রতি আমি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।