![](https://crimetalash.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
মোতালেব দেওয়ান,কেরানীগঞ্জ:জাতীয় নির্বাচনের পরপরই গত ১০/০১/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় রাসেলকে তার বন্ধু আফতাব উদ্দিন রাব্বি লোক মারফত দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার তেলঘাটে পারভিন টাওয়ারের নিচ তলায় তার নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। রাসেল রাব্বির অফিসে হাজির হলে সেখানে উপস্থিত রাব্বির অন্যান্য বন্ধুরা রাব্বির নেতৃত্বে রাতভর রাসেলকে এলোপাথাড়িভাবে লাঠিসোঠা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড মারধর করে মারাত্মক জখম করে এবং কেচি দিয়ে রাসেলের মাথার চুল কেটে দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাত ০২ ঘটিকার দিকে রাসেল গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে রাব্বির নির্দেশে ৪/৫ জন লোক রাসেলকে অজ্ঞান অবস্থায় তার বাসায় পৌছে দেয় এবং রাসেলের স্ত্রীকে এ বিষয়ে থানা পুলিশ বা কাউকে ঘটনার বিষয়ে না জানানোর জন্য হুমকী প্রদান করে আসামীরা চলে যায়। পরদিন সকালে রাসেলের শারীরিক অবস্থা আরো অবনতি হলে তার স্ত্রী তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত মিডফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকায় নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষনা করেন। রাসেল মারা যাওয়ার পর রাব্বির অফিসে নিহত রাসেলকে নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় আফতাব উদ্দিন রাব্বিকে ০১ নম্বর আসামী করে ১৩ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন আসামীর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
চাঞ্চল্যকর ও ব্যাপক আলোচিত এই হত্যাকান্ডের শুরু থেকেই ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য জনাব আসাদুজ্জামান পিপিএম-বার, পুলিশ সুপার ঢাকা মহোদয় সার্বক্ষণিক তদারকি ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জনাব আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপস অ্যান্ড ট্রাফিক-দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে একটি চৌকষ তদন্ত টিম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন ও ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ঘটনার পর থেকেই ব্যাপক তদন্ত কার্য়ক্রম শুরু করে। হত্যাকান্ডের সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশ হত্যার ঘটনাস্থল রাব্বির অফিসে গিয়ে হত্যাকান্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন আলামত জব্দ করে। হত্যাকান্ডে জড়িত এজাহারনামীয় আসামী ছাড়াও তদন্তটিম ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নির্যাতনের বিভিন্ন ভিডিও পর্যালোচনা করে ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের সনাক্ত করে। পরবর্তীতে জনাব শাহাবুদ্দিন কবীর বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও জনাব মাহাবুব আলম, অফিসার ইনচার্জ, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা এর সার্বিক সহযোগীতায় এবং ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাসুদুর রহমান, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা এর নেতৃত্ত্বে একটি আভিযানিক দল তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ঝিনাইদহ জেলার মহেষপুর থানার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বাঁশবাড়িয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অত্র হত্যাকান্ডের মূল হোতা ০১। আফতাব উদ্দিন রাব্বি সহ ২। সজীব (৩৬), ৩। রাজীব (৩৫), ৪। হীরা (৩০), ৫। ফিরোজ (৩১)-দের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অভিযানের ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভোলা জেলার লালমোহন থানায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত আসামী ৬। আলমগীর ঠান্ডু ৭আমির ৮ রনি ,৯দেলোয়ার দেলু ১০শিপন ১১মাহফুজ (১২) মোঃ রতন শেখ সহ সর্বমোট ১২জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে অত্র হত্যাকান্ডের কারণ সম্পর্কে জানা যায়, নিহত রাসেল ০১ নম্বর আসামী রাব্বির বন্ধু ছিলো। কালিগঞ্জ এলাকায় রাসেল বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নিকট থেকে রাব্বির নামে চাদাঁ তোলে কিন্তু রাসেল সেই টাকা রাব্বি ও তাদের অন্যান্য সহযোগীদের না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করে। মূলত আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে ও পারষ্পারিক মতবিরোধের জেরে রাব্বি ও তার সহযোগীরা রাসেলের উপর ক্ষুদ্ধ হয় এবং রাসেলকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় রাসেলকে মারার জন্য রাব্বি লোকজন দিয়ে রাসেলকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে আসে। তারপর উক্ত অফিস রুমে রাব্বি ও তার সহযোগীরা মিলে সারারাত রাসেলকে প্রচন্ড মারধর করে ও কেচি দিয়ে তার চুল কেটে দেয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে রাসেল তার বন্ধু রাব্বিকে ‘আব্বা আব্বা’ বলে ডাকে ও বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করতে থাকে কিন্তু তার পরেও সবাই মিলে তাকে পালাক্রমে মারতে থাকায় রাসেল গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হা রিয়ে ফেলে। একপর্যায়ে রাব্বির লোকজন আহত রাসেলকে অচেতন অবস্থায় রাত ০২ ঘটিকার দিকে তার বাসায় স্ত্রীর কাছে দিয়ে আসে। পরদিন সকালে
রাসেলকে চিকিৎসার জন্য মিডফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাসেল মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করেন পুলিশ প্রশাসন